
রফিকুল ইসলাম কামাল :: ২০০০ সালের ২৬ জুন। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ তথা টেস্ট খেলার জন্য ‘সার্টিফিকেট’ পেল বাংলাদেশ। ২০২০ সালের ২৬ জুন। ঠিক ২০ বছর পূর্ণ হলো বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার।
বাংলাদেশ ২০০০ সালের ২৬ জুন ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির কাছ থেকে টেস্ট খেলার মর্যাদাপ্রাপ্ত হলেও নিজেদের অভিষেক টেস্ট খেলেছিল ওই বছরের ১০ নভেম্বর। ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেকটা হয়েছিল পরাজয় দিয়ে।
ক্রিকেট দুনিয়ার ১০ম দেশ হিসেবে টেস্ট জগতে পা রাখে বাংলাদেশ। অভিষেকের পর থেকে এখন অবধি টাইগার-বাহিনী খেলেছে ১১৯টি টেস্ট ম্যাচ। এসব ম্যাচের প্রেক্ষিতে যদি বিবেচনা বা পর্যালোচনা করা হয়, তবে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ? সাদা পোশাকের পারফরম্যান্সকে কী রঙিন করতে পেরেছেন মুমিনুল হকরা?
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ ১১৯ টেস্ট ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ১৪টিতে, ড্র করেছে ১৬টি ম্যাচ। বাকিগুলো, অর্থাৎ ৮৯টি ম্যাচেই বিষাদময় পরাজয়!
বিশ্লেষণের দরকারই পড়ে না আসলে! পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সব। বলছে কতো হতশ্রী ছিল এখন অবধি বালাদেশের টেস্টযাত্রা। নিজেদের মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেটে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে হারানো, নিজেদের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাঁদেরকে হারানো কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাঁদের মাটিতে পরাজয়ের কালিমায় লেপে দেওয়া–এসবের মধ্যে অবশ্য তৃপ্তির ঢেকুর তোলাই যায়।
বাংলাদেশ নিজেদের ‘অভিজাতযাত্রায়’ সবচেয়ে বেশি ২০টি ম্যাচ খেলেছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তাতে সাকুল্যে একটিমাত্র জয় মুশফিকুর রহিমদের। যেটি এসেছিল বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম মাহেন্দ্রক্ষণ, শততম টেস্টে। শ্রীলঙ্কা জিতেছে ১৬টি ম্যাচ, ৩টি হয়েছে ড্র।
এরপর টাইগার-বাহিনী ১৭টি ম্যাচ খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তাতে উভয় দলের জয় সমান ৭টি করে, ড্র হয়েছে ৩টি ম্যাচ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ১৬টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় ৪টিতে, ড্র ২টি। বাকিগুলোতে ক্যারিবিয়ানরা পেয়েছে জয়।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা ১৫ টেস্টের ১২টিতেই সঙ্গী হার, ৩টিতে ড্র। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২টি টেস্টের মধ্যে কোনো জয় নেই; ১০টিতে হার, ২টিতে ড্র।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট ময়দানে লড়েছে ১১ বার। তাতে সাফল্য মাত্র ২টি ম্যাচ ড্র করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাকিগুলোতে পরাজয়ের বেদনা।
পাকিস্তানের বিপক্ষেও ভারতের সমসংখ্যক ম্যাচ তামিম ইকবালদের। কিন্তু ফলাফল ভারতের বিপক্ষের চেয়েও খারাপ। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছে ১০টি ম্যাচেই, অপরটি ড্র।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ টেস্টের মধ্যে নিজেদের মাটিতে একটিমাত্র জয়। বাকি ৯টিতে সঙ্গী ওই হার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ঘরের মাঠে একটিমাত্র জয়। অপর ৫টি ম্যাচে পরাজয়।
আর টেস্ট ক্রিকেটের নবীন সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটিমাত্র টেস্ট ম্যাচ খেলে সেটিতেই হার! গেল বছর চট্টগ্রামে হওয়া সেই ম্যাচে পরাজয়ের ব্যবধান কতো ছিল, জানেন? ২২৬ রান!
ওই ম্যাচের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম দল হিসেবে ভিন্ন ১০টি দেশের বিপক্ষে হারের স্বাদ গ্রহণ করে!
আয়ারল্যান্ড টেস্ট মর্যাদা পায় ২০১৭ সালের জুনে, আফগানিস্তানের সাথে একই দিন। তবে আইরিশদের সাথে টেস্টে এখনও লড়াইয়ে নামেনি বাংলাদেশ।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ যতোটা সপ্রতিভ, দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট ততোটাই নিষ্প্রভ। টেস্ট ম্যাচ জিততে প্রতিপক্ষকে উভয় ইনিংসে অলআউট করতে হবে, এটাই একমাত্র পথ। কিন্তু বাস্তব দৃশ্যপট বলছে, বাংলাদেশ সে কাজ সিংহভাগ টেস্টেই করতে পারে নি। স্পষ্টত, উভয় ইনিংসে প্রতিপক্ষকে অলআউট করার পর্যায়ে পৌঁছায়নি বাংলাদেশের বোলিং। কিংবা, প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপই বাংলাদেশের বোলিংয়ের চেয়ে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে!
ক্রিকেট বিশ্লেষক, চিন্তকরা অনেক অনেকবার বলেছেন, টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে হলে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোতে আরো জোর দিতে হবে। এখানে দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের যে মান, তা যদি চলমান থাকে, তবে টেস্টে ফল পাওয়া যাবে না। স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে ঘরের মাঠে হঠাৎ হঠাৎ সাফল্য আসবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে উপকার হবে না কিছুই; ভুগতে হবে বিদেশের মাটিতেও।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের ম্যাচ জাতীয় দল ও আশপাশে থাকা ক্রিকেটাররা খেলতে চান না, নানা অজুহাতে এড়িয়ে যান–এমন কথা শোনা যায় প্রায় সময়ই। সব ক্রিকেটার যাতে ঘরোয়া চার দিনের ম্যাচ তথা জাতীয় লিগ কিংবা বিসিএলের ম্যাচ নিয়মিত খেলেন, তা নিশ্চত করা প্রয়োজন, এমন পরামর্শও বিশ্লেষকদের।
শেয়ার করুন :